অচলায়তন ভেঙ্গে মুক্ত ক্যাম্পাসে সবাই রাজা-র স্পন্দন

তখন পড়ন্ত বিকেল, সাদা আর টিল গ্রিন বেলুনে কারা যেন অন্য এক রূপ দিয়েছে এনবিইউ ক্যাম্পাসের চিরাচরিত রাবার বাগানের। সূর্যের তেজ কমে গিয়ে অনেকটা কনে দেখা আলোরই আভা দিচ্ছে রাবার পাতার ফাঁকে। মাঝে ভেসে আসছে বাঁশির সুরও। এমন স্বর্গীয় প্রেক্ষাপটের সাক্ষী যারা রইলেন আর আদতেই যারা সাক্ষ্য বহন করলেন, ‘ভাগ্যবান’ ছাড়া যুতসই আর কোন শব্দের প্রয়োগ যথাযথ হতে পারে, এ যেন অভিধানে চোখ বোলানোরই জোগাড়!
  সহজ-সরল ছেলেবেলার একটা অংশ যদি বলা যায়, হয়তো একদল খেলছে, হঠাৎ করে বয়সে একেবারেই একরত্তি বা খুদে এসে বলছে “আমাকেও নাও না”- একটু বড়রা ‘বড়’ হওয়ার so called ‘advantage’ নিতে কিন্তু এক মুহূর্ত সময় নেয় না – “চল, তুই দুধে-ভাতে” বলার মধ্যে যে এক রকমের ছদ্ম অহমিকা থেকে যায়, তার সদ্ব্যবহার ঠেকায় কে? অথচ এই ‘আমরা সবাই রাজা’-য় রাজা যেন ছোট-বড় বিভেদ ভুলে গিয়েছে সবাই। মুক্ত ছন্দে, মুক্ত পরিবেশে, মুক্ত মননে এই একদিনের এক চিলতে বিকেলে রাজার রাজত্বে আত্মহারা কচিকাঁচারা। আর তাদের হাত ধরলেন স্পন্দন গোষ্ঠীর ধারক ও বাহকরা, যাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক কল্লোল বাগচী, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের মধ্যে মহেন, জ্যোতির্ময়, লিপিকা, নমিতা ও আরও অনেকে।
  হঠাৎ কেন এই উদ্যোগ? এ দিনের ‘আমরা সবাই রাজা’ কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা তথা ‘স্পন্দন’- এর হৃদপিণ্ড, যার আরও এক পরিচয় বাগডোগরা কলেজের শিক্ষক কল্লোল বাগচী জানান, ‘স্পন্দন’-এর অর্থই যেখানে নাড়া দেওয়া, সেখানে আজকের কিশলয়দের যন্ত্রনির্ভর জীবন থেকে কিছুটা নাড়িয়ে তুলতেই, খেলার ছলে তাদের সৃষ্টিমুখর করে তোলার লক্ষ্যেই এই প্রয়াস। আর তাই তাদের উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও উৎসাহ পেতেই প্রকৃতির কোলে খেলার ছলে ছবি আঁকা, মাটির মূর্তি গড়ে যেন সেই হারিয়ে যাওয়া প্রাণেরই স্পন্দন ফিরে পেল এক মুঠো শৈশব।
   এ দিন রং, পেনসিল হাতে একদিকে যেমন খুদে শিল্পীদের সারল্য নজরে আসে, ঠিক তেমনি এক তাল কাদা মাটি দিয়ে গোলাপ, শিব ঠাকুর, গণেশ, প্রদীপ বানিয়ে তাক লাগায় ডোলু, অলিভা, জয়শ্রী, হিমার মত খুদে কারিগররা।
  ‘স্পন্দন’-এর লিপিকা জানান, এই ইন্দ্রজালের অচলায়তনে একসাথে মিলে খেলার যে আনন্দ আর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা, তাদের ছন্দে ফেরাতে এনবিইউর প্রাক্তনী হিসেবে প্রিয় ক্যাম্পাসকেই ‘আমরা সবাই রাজা’-র ‘রাজত্ব’ হিসেবে বেছে নেওয়ায় সবটা মিলিয়ে এক দারুণ অনুভূতি।
  আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ছোটদের খেলার মাঠের সংখ্যা আশেপাশে কতটা নজরে আসে, প্রশ্নটা নেহাত অর্বাচীনের মত হলেও প্রতি মুহূর্তে তা কিন্তু ঠাহর করছি প্রত্যেকে। কংক্রিটের গগনচুম্বী ইমারতের মাথা খুঁজতে ঘাড়ে ব্যথা হবার উপক্রম নিত্যকার রোজনামচা। তা থেকে কিছুটা হলেও কুলোর বাতাস তো পেল কচিকাঁচারা, ‘স্পন্দন’-এর হাত ধরে!