গত ১৬ মে শিলিগুড়ি শিবমন্দির এলাকার এক ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ববিতা দত্তের ঝুলন্ত দেহ। এরপরই এই ঘটনায় তাঁর সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলে মৃতার পরিবার। শনিবার রাতে মাটিগাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়, যার বয়ানে উঠে আসে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষকের সাথে শারীরিক সম্পর্কে গড়ে তোলেন ঐ অধ্যাপক। বিয়ের প্রসঙ্গ তুলতেই তরুণী গবেষকের কেরিয়ার নষ্ট করে দেবার হুমকিমূলক কথা বলেন অধ্যাপক বলে অভিযোগ। এরপর সমস্ত বিষয় সংবাদ মাধ্যমে চাউর করে দেবার পাল্টা হুমকি দেওয়াতেই তাকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে সরব হয়েছেন ঐ গবেষকের পরিবার সহ নিকটজনেরা। সোমবার দুপুর নাগাদ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের তরফে বিশ্ব বিদ্যালয় চত্বরে অভিযুক্ত অধ্যাপকের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে, 'জাস্টিস ফর ববিতা দত্ত' প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে, অভিযুক্ত অধ্যাপকের ছবি আগুনে পুড়িয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রতিবাদে অংশ নেন এআইডিএসও সংগঠনের সদস্যরাও। এবিভিপি বিশ্ববিদ্যালয় ইন চার্জ অভিজিৎ রায় এবং এবিভিপি উত্তরবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক দীপ্ত দে জানান, শুধু ববিতার সহপাঠী ছাড়াও আরও বেশ কিছু গবেষক কয়েকবার এ ঘটনায় অভিযুক্ত অধ্যাপকের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। অথচ ববিতার মৃত্যুর চার দিন অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরেও হেলদোলহীন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার। যার নামে এত বড় অভিযোগ সামনে উঠে এসেছে, তাঁকে কেন এখনও সাসপেন্ড করা হয়নি, প্রশ্ন তুলে এদিন স্মারকলিপি জমা দেন প্রতিবাদকারীরা। প্রসঙ্গত, ববিতার মৃত্যুর পর তাঁর ঘর থেকে উদ্ধার হয় একটি সুইসাইড নোটও, যাতে পরিষ্কারভাবে লেখা রয়েছে, "যত বেশি তোমায় ভালোবাসি তত বেশি তোমায় হারিয়ে ফেলি - লাহা। আর. এস. -এর মৃত্যু চাই এখন। কোন দুর্ঘটনা হোক বা অশান্তি। মরে যা তবে শান্তি পাবো"। সোমবার যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ গবেষক ববিতা দত্তের রহস্য মৃত্যুতে প্রতিবাদের সামিল হয়েছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অব্যাহত রইল মহিলা ক্রিকেট এই নিয়ে সমালোচনাও কিন্তু চলছেই। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে এদিন দর্শকের ভূমিকায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উচ্ছ্বাসও ছিল চোখে পড়ার মত। অথচ যে তরুণী মেধাবী গবেষিকার রহস্যমৃত্যুর চারদিনও কাটেনি, সে বিষয়ে কোনো রকম উচ্চবাচ্য নজরে এলো না। এবিভিপির দীপ্ত দে আরও জানান, ববিতার মৃত্যুর দিন অর্থাৎ ১৬ ই মে দুপুর ১২টা ৪৬ মিনিটে সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্ত অধ্যাপককে দেখা যায়, ববিতা যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসছেন। পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখনও কেন নিশ্চুপ, ২৪ ঘন্টার মধ্যে অধ্যাপকের গ্রেফতারি ও রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি এবিভিপির।