একা হাতে ঘরের কাজ করার পাশাপাশি সময় মত পড়াশোনা করে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করে তাক লাগালো আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের গাঙ্গুটিয়া চা বাগানের গুম্ফা লাইনের বাসিন্দা দীপশিখা লামা। কালচিনি হিন্দি হাই স্কুলের ছাত্রী দীপশিখার উচ্চমাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৩৮। চা বাগানের মেয়ে দীপশিখা লামার এরূপ ফলাফলে খুশির হাওয়া এলাকা জুড়ে।
দীপশিখার বাবা পূর্বে চা বাগানের শ্রমিক ছিলেন, তবে সংসারের হাল ধরতে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন তিনি। আর মা এখনও কাজ করছেন বাগানে। ফলে একা হাতেই ঘর সামলাতে এবং ছোট বোনকে দেখাশোনা করতে হতো দীপশিখাকে। এর মাঝেই সময় বের করে পড়াশোনা চালিয়ে যেত সে।
স্কুল শিক্ষক ও গৃহ শিক্ষকদের সহায়তায় হিন্দিতে ৮৫, ইংরেজিতে ৯০, ভূগোলে ৮৫, ইতিহাসে ৮৪ এবং রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ৯৪ মিলিয়ে এবার উচ্চমাধ্যমিকে মোট ৪৩৮ নম্বর পেয়েছে দীপশিখা। আগামীতে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে সাম্মানিক স্নাতক নিয়ে পড়াশোনা করে করে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি আমলা হবার স্বপ্ন দু’ চোখে তার।
এ বিষয়ে দিপশিখার মা শ্যামনা লামা বলেন, “দুই মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য আমরা কষ্ট করছি। ঘর সামলানোর পাশাপাশি দীপশিখা যে এত ভালো ফল করবে তা আমরা সত্যি ভাবিনি। সে যতদূর পড়াশোনা করতে চায় আমরা করাবো।”
অন্যদিকে, দীপশিখা জানায়, 'মা বাগানে কাজে যাওয়ায় ঘরের কাজ করতে হতো। ফলে নিয়মিত সময় করে পড়াশোনা করা হতো না। তবে পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে সব ভুলে কয়েক ঘন্টা পড়াশোনা করেছি, আর তারই ফল হয়তো আমার এই নম্বর। পরিবারের সদস্যরা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহায়তায় এই অর্জন আমার।'
এক চা বাগানের মেয়ে এরূপ ফল করায় খুশি এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও। রবিবার দীপশিখার বাড়ি এসে তারই সাথে তার মাকে সংবর্ধনা জানান স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য মিনা নাগ। তিনি বলেন, “চা বলয়ের মেয়েরাও এখন সব ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। দীপশিখার এরূপ ফলাফলে আমরা সকলে খুব খুশি।”