হারিয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণমস্তক পবিত্র পাখি!

নদী হোক কিংবা কাদার চর, খাঁড়ি অথবা উপকূল, মিষ্টি এবং লবণাক্ত জলাভূমি প্রায় সর্বত্রই অবাধ বিচরণ এদের। পানকৌড়ি হোক কিংবা বক, অন্যান্য পাখির সাথেও মিলেমিশে দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে। কখনো এদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় গবাদি পশুর পিছু ধরে। খাদ্য তালিকায় রয়েছে মাছ ব্যাং, শামুক, গুগলি, পোকা-মাকড়। এই খাবারের প্রাচুর্যের ওপর ভিত্তি করেই স্বভাবে এরা যাযাবর। দেখতে অনেকটা বকের মত হলেও ওড়ার সময় এরা গলা ভাঁজ করে না। বকেরই সমগোত্রীয় এই পাখির নাম ‘কালোমাথা কাস্তেচরা’, ইংরেজিতে ‘Black-headed ibis’। গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী, আবার এই কৃষ্ণমস্তক পাখিকেই 'পবিত্র' হিসেবে ধরা হয়।

  গত কয়েক দশক ধরে আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছে এদের সংখ্যা। সমীক্ষা অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্বের বর্তমানে এদের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১০-২০ হাজারের মতো। আর সে কারণেই আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (IUCN)-এর তরফে ‘প্রায় বিপদগ্রস্ত’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এই কালোমাথা কাস্তেচরাকে।

  বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন কাল। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, উত্তরবঙ্গে একমাত্র নকশালবাড়ি এই পাখিদের বাস। ১৯৯৩ সালের দিকে নকশালবাড়িতে এই পরিযায়ী দলের দেখা মেলে। প্রজননের পর ছানাদের বড় করে শীতের আগেই অন্যত্র চলে যায় এই প্রজাতি। এবার বিপন্নের তালিকায় থাকা এই পাখির সংরক্ষণ নিয়েই এ বছরে শুরু হল গণনা।

  বিগত ২ বছরে যথাক্রমে ২০০ ও ২৪০টি কাস্তেচরার খোঁজ পাওয়া গেলেও এরা বিপন্নপ্রায় হচ্ছে প্রতিনিয়ত, এ দিনের গণনায় ধারণা বিশেষজ্ঞদের! সংরক্ষণ করা ঠিক হলেই এদের বিপন্নতা থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মত পরিবেশপ্রেমী তথা ন্যাফের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসুর। বনদফতরের এডিএফও জানান, এদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ করতে তৎপর হয়েছে কার্শিয়াঙ বন দফতর। আশা ও ভরসা যোগাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ও শিলিগুড়ি হিমালয়ান নেচার অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন।